প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ

“আমার ঘরে আমার স্কুল”

Rajshahi College, Rajshahi

“Choose your career carefully and we’ll help you find your way..”

রাজশাহী কলেজ (Rajshahi College) || View in english

রাজশাহী কলেজ (ইংরেজী: Rajshahi College) বাংলাদেশ-এর উচ্চতর শিক্ষার প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠানগুলির অন্যতম। দুবলাহাটির রাজা রায় বাহাদুর হরলাল রায় এর আর্থিক সহায়তায় রাজশাহী শহরে ১৮৭৩ সালে রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা হরনাথ রায় কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য যে জমি দান সে সম্পত্তি থেকে বার্ষিক আয় ছিল পাঁচ হাজার টাকা। এই কলেজ প্রতিষ্ঠার পর অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ববঙ্গ, উত্তর বঙ্গ, বিহার, অসম ও পূর্ণিয়ার এর অধিবাসীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

এই কলেজকে ঢাকা কলেজচট্টগ্রাম কলেজ এর পরে বাংলাদেশের তৃতীয় প্রাচীনতম কলেজ মনে করা হয়। অবিভক্ত বাংলার এই অঞ্চলে রাজশাহী কলেজ ছিল প্রথম প্রতিষ্ঠান যেখানে মাস্টার ডিগ্রী পর্যন্ত পঠিত হয়। এছাড়াও ২২টি বিষয়ে তিন বছরের স্নাতক এবং ২০টি বিষয়ে চার বছর স্নাতক সম্মান ডিগ্রী কোর্স পড়ানো হয়। বর্তমানের এই কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর অধিভুক্ত। ১৯৯৬ সাল থেকে এই কলেজে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ছাত্র নথিভুক্ত করা বন্ধ করা হলেও বর্তমানে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে পুনরায় ভর্ত করা হচ্ছে। শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত রাজশাহী কলেজ সংলগ্ন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল এবং খুব কাছাকাছি বিখ্যাত বরেন্দ্র যাদুঘর

 

ইতিহাস ও অ্যাকাডেমিক পটভূমি

শিক্ষানগরী হিসেবে রাজশাহী মহানগরীর গোড়াপত্তন হয় ১৮২৮ সালে ‘বউলিয়া ইংলিশ স্কুল’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। প্রতিষ্ঠানটি তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় আধুনিক শিক্ষার ইতিহাসে পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছিল। মূলত ইংরেজি শিক্ষার প্রতিস্থাপনা ও প্রসারকল্পে সে সময় রাজশাহীতে কর্মরত ইংরেজ কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল’। সেদিনের সে ক্ষুদ্র ‘বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল’ ১৮৩৬ সালে প্রাদেশিক সরকার জাতীয়করণ করলে এ স্কুলটি রাজশাহী জিলা (বা জেলা) স্কুল নামে পরিচিত (এই বিদ্যালয় রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল হিসাবে এখন পরিচিত)। সে স্কুলের ছাত্রদের উচ্চতর শিক্ষার জন্য একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৮৭৩ সালে জেলা স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের মর্যাদা দেয়া হয় এবং একই বছর ৫ জন হিন্দু ও ১ জন মুসলমান ছাত্রসহ মাত্র ছয় জন ছাত্র নিয়ে কলেজিয়েট স্কুলের সঙ্গে চালু হয় উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর সমমানের এফ. এ (ফার্স্ট আর্টস) কোর্স। ১৮৭৮ সালে এই কলেজকে প্রথম গ্রেড মর্যাদা “First Grade Rank” দেয়া এবং “রাজশাহী কলেজ” নামে নামকরণ করার সাথেসাথে একে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধিভুক্ত করে এখানে বি.এ. কোর্স চালু করা হলে উত্তরবঙ্গের সর্বপ্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ। ১৮৮১ সালে এই কলেজে স্নাতকোত্তর শ্রেণীর উদ্বোধন করা হয় এবং ১৮৮৩ সালে যোগ হয় বি.এল কোর্স। ১৯০৯ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন আইনে কলেজ তার চাহিদা মেটাতে না পারলে মাস্টার্স কোর্স ও বি.এল. কোর্সের অধিভুক্তি বাতিল করা হয়।

রাজশাহী শহরে পাশ্চত্য শিক্ষা বিস্তারে ভূস্বামী রাজা, জমিদার এবং বিত্তশালীদের ভূমিকা ছিলো উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে দুবলহাটির জমিদার হরনাথ রায় চৌধুরী, দীঘাপতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায়, রাজা প্রমোদ রায় ও বসন্ত রায়; পুঠিয়ার রাণী শরৎসুন্দরী দেবী ও হেমন্তকুমারী দেবী; বলিহারীর কুমার শরবিন্দু রায়; খান বাহাদুর এমাদ উদ্দীন আহমেদ, কিমিয়া-ই-সাদাত-এর অনুবাদক মীর্জা মোঃ ইউসুফ আলী, হাজী লাল মোহাম্মদ, নাটোরের জমিদার পরিবারের খান বাহাদুর রশীদ খান চৌধুরী, খান বাহাদুর এরশাদ আল খান চৌধুরী ও বঙ্গীয় আইন পরিষদের ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার আশরাফ আলী খান চৌধরী ছিলেন অগ্রগণ্য। এছাড়া নাটোরের খান চৌধুরী জমিদান পরিবার রাজশাহী শহরের হেতম খাঁ এলাকার তাঁদের পারিবারিক বাসস্থান ‘চৌধুরী লজ’ রাজশাহী কলেজে অধ্যয়নরত প্রায় বিশ জন গরীব মুসলমান ছাত্রের জন্য বিনা ভাড়ায় থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তদানীন্তন পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজের শিক্ষার উন্নয়নে তাদের এই ভূমিকা ছিলো তাৎপর্যপূর্ণ।

কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল ছিলেন হরগোবিন্দ সেন, যিনি রাজশাহী জিলা স্কুলের প্রধানশিক্ষক ছিলেন। তিনি পাঁচ বছর (১৮৭৩-১৮৭৮) এই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। ১৮৭৫ সালে প্রথম ব্যাচের এফ.এ পরীক্ষায় উপস্থিত ছাত্রদের মধ্যে মাত্র দুইজন পাশ করে। সরকার কলেজটি উঠিয়ে দিতে চেয়েছিল কিন্তু রাজশাহী এসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ যে তাঁদের শক্ত প্রচেষ্টা শুধু তা ঠেকিয়েই দেয়নি বরং এই কলেজকে আপগ্রেড করে বি.এ. কোর্স প্রবর্তনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। রাজশাহী এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দিঘাপাতিয়ার রাজা প্রমথনাথ রায় বাহাদুর রাজশাহী কলেজে ডিগ্রি কোর্স প্রবর্তনের জন্য শাহী এসোসিয়েশন এর মাধ্যমে সরকারকে টাকা ১৫০,০০০ দেন। কলেজ অক্টোবর১৮৭৭ সালে ডিগ্রী প্রোগ্রামের অনুমোদন পায় এবং ১৮৭৮ সালে বি.এ. কোর্স চালু হয়। F T Dowding ১৮৭৯ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন।

১৯০৪ সালে, ফী ছাড়া সংস্কৃত বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য রাজশাহী কলেজ প্রশাসনের অধীনে মহারাণী হেমন্তকুমারী সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বলিহারের কুমার শরদিন্দ্বু রায় এর আর্থিক সহায়তায় ১৯১০ সালে রাজা কৃষ্ণেন্দু হল নির্মিত হয়। ১৯১৫ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৫৭,১৪৫ টাকা ব্যয়ে পদার্থবিজ্ঞান ভবন নির্মান করে। রাজশাহী এসোসিয়েশনের উদ্যোগ এবং অধ্যক্ষ কুমুদিনীকান্ত ব্যানার্জির প্রচেষ্টায় মোট ৬টি হোস্টেল নির্মিত হয়ঃ ১৯২২ সালে ৩,৫৩,৮৬৩ টাকা ব্যয়ে ৫টি এবং ১৯২৩ সালে ৭৮,০০০ টাকা ব্যয়ে দুতলাযুক্ত একটি হোস্টেল নির্মিত হয়। ১৯২৫-২৬ সেশনে ৮৬,৮০৯ টাকা খরচে আর্টস বিল্ডিং এবং ১৯২৭ সালে কলেজের দক্ষিণ পার্শ্বে পদ্মা নদীর ধারে অধ্যক্ষের জন্য বাসভবন নির্মান করা হয়। এভাবে ধীরে ধীরে প্রায় ৩৫ একর যায়গার উপর অন্যান্য ভবন নির্মিত হয়।

১৮৮৪ সালে রাজশাহী কলেজ চত্বরে মাদ্রাসা ভবন নির্মিত হয়। ১৯৩০ সালে মাদ্রাসা অন্যত্র স্থানান্তরিত হলে ঐ বছরই ১৯০৯সালে নির্মিত ফুলার ছাত্রাবাসটি কলেজকে হস্তান্তর করা হয়। দিঘাপাতিয়ার রাজা বসন্তকুমার রায়ের আর্থিক সহায়তায় রাজশাহী কলেজ প্রশাসনের অধীনে ১৯৩৬ সালে এগ্রিকালচারাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায় এবং ভবনটি কলেজের একটি ছাত্রাবাসে পরিণত হয়।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত হয়ে কলেজে ১৮৮১ সালে এমএ কোর্স এবং ১৮৮৩ সালে থেকে স্নাতক ল’ কোর্স চালু হয়। কয়েক বছরের মধ্যেই রাজশাহী কলেজ থেকে আটজন ছাত্র এম.এ এবং ষাটজন ছাত্র বিএল ডিগ্রী অর্জন করে। কিন্তু কলেজ এমএ এবং বিএল কোর্সর জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯০৯ সাল থেকে এমএ ও বিএল কোর্স স্থগিত রাখে।
পূর্ব পাকিস্তানে রাজশাহী কলেজ প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এ অধিভুক্ত হয় এবং পরে ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হয়। এই কলেজে আইকম, বি.কম (পাস) এবং বি.কম (সম্মান) কোর্স যথাক্রমে ১৯৫২, ১৯৫৪ এবং ১৯৬১ সালে চালু হয়। ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হলে এর অধীনে এই কলেজে ১৯৯৪ সালে মাস্টার স্তরের কোর্স পুনরায় চালু হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোর্স বন্ধ থাকলেও এই অঞ্চলের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ২০০৯-১০ শিক্ষবর্ষ থেকে পুনরায় চালু করা হয়।

বর্তমানে, কলেজ ২২টি বিষয়ে সম্মান কোর্স এবং ২১ মাস্টার কোর্স চালু রয়েছে। ২৪৯ শিক্ষকের মধ্যে ৫৬ নারী শিক্ষক রয়েছেন। কলেজ লাইব্রেরীতে অনেক দুর্লভ বই, গেজেট, এনসাক্লোপিডিয়া এবং পাণ্ডুলিপি রয়েছে এবং প্রাচীন পাণ্ডুলিপির অনেকগুলিই পুঁথি-তে সমৃদ্ধ। বর্তমানে (১৩/০২/২০১৩)কলেজ লাইব্রেরীতে মোট বইয়ের সংখ্যা ছিল মোট ৭৭,৯৪৯।

 

ভবনসমূহ

রাজশাহী কলেজ প্রশাসন ভবন

প্রতিষ্ঠার শুরুতে রাজশাহী কলেজের কোন নিজস্ব ভবন ছিল না। রাজশাহী এসোসিয়েশন এর নেতৃবৃন্দ কলেজের প্রথম ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। একজন দক্ষ ইংরেজ প্রকৌশলীর পরিকল্পনায় ১৮৮৪ সালে একষট্টি হাজার সাতশ টাকা ব্যয়ে বর্তমান প্রশাসন ভবনটি নির্মিত হয়। গাঢ় লাল বর্ণের দোতলা ভবনটি একাডেমিক কালের গ্রাস জয় করে নগরীর প্রধান ও প্রাচীনতম সড়কের পাশে আজও মথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভবনটি একটি ব্রিটিশ ভারতীয় ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের ভাল উদাহরণ। রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক ১৮৯৪ সালে পিএন ছাত্রাবাস (কলেজের প্রথম ছাত্রাবাস) নির্মিত হয়। রায় বাহাদুর কুমুদিনীকান্ত বন্দোপাধ্যায় যখন অধ্যক্ষ (১৮৯৭-১৯১৯, ১৯২০-১৯২৪) হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে কলেজের উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রাখেন। পুঁটিয়ার রাণী হেমন্তকুমারীর অর্থে ১৯০২ সালে হেমন্তকুমারী হোস্টেল নির্মিত হয়।

ঔপনিবেশিক আমলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুরোনো বাড়ীগুলো হলো ফুলার ছাত্রাবাস, জীববিজ্ঞান জীববিজ্ঞান ভবন, রসায়ন ভবন, পদার্থবিজ্ঞান ভবন, প্রাক্তন মুসলিম ছাত্রাবাস ইত্যাদি। নবীনতর অর্থাৎ 1950 সালের পর যে সকল ভবন নির্মিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে লাইব্রেরী ভবন, কলা ভবন এবং অডিটোরিয়াম অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া ১৯৯০ সালে একটি নতুন বিজ্ঞান ভবন নির্মিত হয়েছে।

এর পর একে একে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন ভবন, ছাত্রাবাস, শিক্ষকদের আবাসস্থল, অধ্যক্ষের বাসভবন। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে রাজশাহী কলেজে গড়ে উঠেছে পাঁচটি বিজ্ঞান ভবন, দুইটি কলাভবন, ইরেজি বিভাগের জন্য একটি পৃথক ভবন; পুকুরের পশ্চিম পাড়ে রয়েছে ‘গ্যালারি ভবন’। ‘গ্যালারি ভবন’ ১৮৮৮ সালে নির্মিত হয়ে প্রথমে রাজশাহী মাদ্রাসা নামে এবং পরে ১৭নং গ্যালারি হিসাবে পরিচিতি পায়। প্রখ্যাত দানবীর হাজী মুহম্মদ মহসীন-এর আর্থিক অনুদানে নির্মিত এই ভবনটি বর্তমানে ‘হাজী মুহম্মদ মহসীন ভবন’ নামে পরিচিত। ১৯০৯ সালে নির্মিত হয় কলেজেরে অন্যতম একটি সুন্দর স্থাপনা ‘মোহামেডান ফুলার হোস্টল’। বর্তমানে ভবনটি কলেজের বাংলা, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান, উর্দু, সংস্কৃত, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি বিভাগের কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কলেজের সম্মুখ চত্বরে আছে একটি শহীদ মিনার এবং শহীদ মিনারের পশ্চিমে অবস্থিত লাইব্রেরি ও অডিটোরিয়াম ভবন।

খরস্রোতা পদ্মা নদীর উত্তরে হযরত শাহ মখদুম (রহঃ) এর মাজার-এর পূর্ব পাশে নির্মিত হয় অধ্যক্ষের দোতলা বাসভবন। এই ভবনটিতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদগণ বসবাস করে গেছেন। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মহোদয়ও এখানে বসবাস করছেন। ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ভবনটি এখনও স্বমহিমায় অক্ষত রয়েছে। অধ্যক্ষের বাসভবনের পূর্বপ্রান্তে শিক্ষকদের জন্য রয়েছে দুটি তিন তলা আবাসিক ভবন। ছাত্রদের জন্য বিভাগপূর্ব কালে ছয়টি বক নিয়ে একটি ছাত্রাবাস নির্মিত হয়। বিভাগোত্তর কালে এই ছাত্রাবাসের আরেকটি ব্লক নির্মিত হয়্ কলেজের উত্তর দিকে দুটি ছাত্রীনিবাস নির্মিত হয়েছে।

 

গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, প্রকাশনা ও তথ্য পরিসেবাঃ

গ্রন্থাগারঃ রাজশাহী কলেজের প্রসিদ্ধির অন্যতম কারণ হলো এর গ্রণ্থাগার যাতে পুরাতন মূল্যবান ও সাম্প্রতিক সংষ্করনের বই, জার্ণাল এবং সাময়িকির প্রাচুর্য রয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক খ্যাত মুদ্রিত তথ্য প্রাপ্তির নির্ভরযোগ্য উৎস।

গবেষণাগারঃ কুড়িটি গবেষণাগার যা পরীক্ষণ করার জন্য আধুনিক ও আদি যন্ত্রপাতি দ্বারা সজ্জিত।

প্রকাশনাঃ রাজশাহী কলেজের নিয়মিতভাবে জনপ্রিয় বার্ষিকি ও সাময়িকি প্রকাশে ঐতিহ্য বিদ্যমান। উপরন্তু বর্তমানে বিশেষ এবং গবেষণা সমৃদ্ধ জার্ণালের প্রকাশনা এই ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধতর করেছে।

তথ্য পরিসেবাঃ রাজশাহী কলেজের সকল তথ্য ও উপাত্তকে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় আনার সম্ভবতঃ একমাত্র সাহসী প্রতিষ্ঠান এবং একাজ অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করার জন্য নিজস্ব সার্ভার স্টেশন, LAN, ব্রডব্যাণ্ড লিজড লাইন সংযোগ স্থাপনে অগ্রগামী।

 

নথিভুক্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা (শুরু থেকে বর্তমান)

১৮৭৩ সালে 1 এপ্রিল মাত্র ছয় জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও অতিদ্রুত সব অনিশ্চয়তা ও প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে কলেজটি দেখা পায় সোনালী ভবিষ্যতের। ১৮৭৮ সালেই এর ছাত্রসংখ্যা একশতে উন্নীত হয়। প্রতিবছরই ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯০০ সালে দুইশ, ১৯১০ সালে চারশ, ১৯২০ সালে ৮০০ এবং ১৯২৪ সালে উন্নীত হয় অনধিক এক হাজার জনে। ১৯৭৩ সালে মুসলমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ থাকলেও পরবর্তী ৫ বছর তা অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু এই সংখ্যা ১৯১৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৬ জনে এবং ১৯২৪ সালে ২১৫ জন। ১৯৩১ সালে প্রথম ছাত্রী ভর্তি করা হয়।

পরবর্তীতে মুসলমান শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ১৯৪৭ সালে মুসলমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা হিন্দু শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে যায়। ১৯৭০ সালে কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১,৮৪০ জন যার মধ্যে ৩০০ জন ছাত্রী। স্বাধীনতার পর এই সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯০ সালে দাঁড়ায় ৪,৭৩২ জনে যার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১,৩৫২ জন। কলেজের ছাত্রসংখ্যা ২০০০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৮,০০০ এবং ২০১৩ সালে প্রায় ২৫,০০০।

 

রাজশাহী কলেজ ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ

জাতির সামাজিক ও রাজনৈতিক সকল সংকটে রাজশাহী কলেজের শিক্ষক এবং ছাত্র ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। তারা স্বদেশী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা আন্দোলন কালে ঢাকা-য় ছাত্র হত্যাকাণ্ডের পরপরই রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন-এ যুক্ত হয় এবং ভাষা আন্দোলনকে উৎসরগ করে শহীদদের স্মরণে একটি শহীদ মিনার নির্মান করেন যাকে সম্ভবত দেশের প্রথম শহীদ মিনার মনে করা হয় (এবং সংক্ষিপ্ত আয়ুষ্মান্)। ১৯৬৯ সালে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটি ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী ধ্বংশ করে ফেলে। এটি পুনঃস্থাপন করতে বর্তমান স্মৃতিস্তম্ভটি ১৯৭৩ সালে নির্মান করা হয়।

শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে ১৯৬২ এবং ১৯৬৯ ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁরা বিপুল সংখ্যায় যোগ দিয়ে মহান সাহস এবং বীরত্ব সঙ্গে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করতে সহায়তা করেন।

 

উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন ও বর্তমান অনুষদ, এবং ছাত্র (অ্যালামনাই)
প্রাক্তন অনুষদ (ফ্যাকাল্টি)-

 

বর্তমান শিক্ষা পরিষদ

সম্প্রতি এই প্রতিষ্ঠানে ২২ জন অধ্যাপক, ৫৭ সহযোগী অধ্যাপক, ৮০ জন সহকারী অধ্যাপক ও ৮২ জন প্রভাষক সমন্বয়ে শিক্ষা পরিষদ বিদ্যমান। এঁদের অনেকেই খ্যাতিসম্পন্ন এবং প্রতিশ্রুতিশীল যাঁদের কারো কারো নাম উল্লেখযোগ্য। কলেজের বর্তমান শিক্ষা পরিষদের তালিকা এই লিংকে পাওয়া যাবে।

 

প্রাক্তন ছাত্র (অ্যালামনাই)-

 

শেষ কথা

রাজশাহী কলেজে বরাবরই শিক্ষার মান উন্নত ছিল এবং বর্তমানেও তা অব্যাহত আছে। কলেজের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের সাফল্য কলেজের উন্নত শিক্ষামানের সাক্ষ্য বহন করে। উলেখ্য, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত তদানীন্তন পূর্ববাংলায় একমাত্র রাজশাহী কলেজেই স্নাতক সম্মান ও মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করা হতো। সে সময় অবিভক্ত বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও আসাম, বিহার ও উড়িষ্যার থেকে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের জন্য আসতেন। শুধু তাই নয়, অবিভক্ত ভারতবের্ষ রাজশাহী পরিচয় ছিল রাজশাহী কলেজের নামে।

 

ভৌগোলিক অবস্থান

Coordinates: 24°21’52″N 88°35’41″E

 

সূত্র
  1. www.thedailystar.net/campus/2010/03/04/feature_rajshahi…
  2. Wikipedia article: http://en.wikipedia.org/wiki/Rajshahi_College
  3. http://www.eduicon.com/Institute/?Institute_Basic_ID=4442